এক রাতের গল্প
-রাখী চক্রবর্তী
অজয়ের ঠামের ঘরটা খাঁ খাঁ করছে। আমরা সব বন্ধুরা যখন আসতাম ঠাম কতো গল্প করতো আমাদের সাথে। কতো রকমের খাবার দিত। অনেক, অনেক কিছু। আজ কেমন যেন লাগছে অরিন্দমের। সেই যে মেয়ের বাড়ি বেড়াতে গেল ঠাম আর ফিরলো না। অরিন্দম ঠামের ঘরে বসে পুরনো দিনের কথা ভাবছে। অজয়ের বন্ধুদের মধ্যে অরিন্দম শুধু এসেছে ঠামের অকালে চলে যাবার কথা শুনে। ও বড় প্রিয় ছিল ঠামের।
নিজের ঠামের কথা তো ওর কিছুই মনে নেই। এতো ভালবাসা কে দেবে!
– কি রে, অরিন্দম কি ভাবছিস?
– কি রে অজয় কোথায় ছিলি এতোক্ষণ আমাকে একা ঘরে রেখে?
-কেন? তোর ভয় করছে নাকি।
– না না এমনি বলছি। হ্যাঁ রে কাকু কাকিমাকে দেখছি না তো।
–মা বাবা নেই রে। পিসির বাড়ি গেছে। কাল চলে আসবে ।
–তুই একা থাকবি রাতে ভয় করবে না
– ধুস্ বাচ্চা ছেলে নাকি যে ভয় পাবো। তুই বসে থাক একটু। আমি আসছি। শোন আজ তো অমাবস্যা। প্ল্যানচ্যাট করবি তো? ঠামকে ডাকবি আজ।
– হ্যাঁ তো।
-আমি যা যা বলব মন দিয়ে শোন। ঠিক রাত্রি আটটার সময় ঠামের আত্মা বাগানে পায়চারি করে। তুই সবটা দেখবি। চিত্কার করবি না কিন্তু তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে।তারপর প্ল্যানচ্যাট করবো।
– হুম ঠিক আছে।ৎআমি এই রকম রাতের জন্য কতদিন অপেক্ষা করেছিলাম। এর মধ্যে ঠাম মারা গেল। খুব কষ্ট পেয়ে ছিলাম।ঠামের মৃত্যু মন থেকে মেনে নিতে পারছি না।যাই হোক ঠামের সাথে কথা বলবো পুরো প্ল্যানচ্যাটের রিপোর্ট দৈনিক পত্রিকাতে ছাপা হবে।ৎআমি মৃত আত্মাদের নিয়ে গবেষণা করবো।
অনেক ক্ষণ ধরে
দুই বন্ধুতে গল্প গুজব হল।
এখন রাত আটটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি।
অজয় অরিন্দমকে বললো, আমি একটু বড় বাইরে যাচ্ছি তুই বারান্দাতে গিয়ে বস। যেমন যেমন বলেছি তেমনটাই করবি।
অজয়ের বাড়ির বারান্দার সামনেই ওদের বাগান। ঠিক রাত আটটায় ঠামের আত্মা বাগানে পায়চারি করবে। অরিন্দম চেয়ার নিয়ে আলো নিভিয়ে বসে আছে। ঠিক আটটা, দেওয়াল ঘড়িতে ঘণ্টা বাজলো ঢং ঢং ঢং..
ঠাম বাগানটা পায়চারি করছে। আরি বাস! এভাবে আত্মা ঘোরাঘুরি করছে? ভাবা যায়!সবাইকে বলবো। না না এখন কাউকে কিছু বলা যাবে না। আগে রিসার্চ করি আত্মাদের নিয়ে ভালো আত্মা,খারাপ আত্মা, বদমেজাজি আত্মা ।
ঠিক দশ মিনিট মতো ঠামের আত্মা বাগানে পায়চারি করলো। তারপর ঠাম বাগানের ডান দিক দিয়ে আস্তে আস্তে উধাও হয়ে গেল।
দ্বিতীয় ধাপ ,
এবার অরিন্দম অজয়ের কথা মতো ঠামের ঘরে গিয়ে বসলো। এবার আসল কাজ শুরু হবে। প্রদীপ জ্বলছে ঠামের ঘরে। খুব অন্ধকার ঘরটা। এক কোনে প্রদীপ জ্বলছে।এর মধ্যে হঠাৎ ঠামের ঘরটা ধুনোর গন্ধতে ও ধোঁয়াতে ভরে গেল। অরিন্দমের গা শিরশিরিয়ে উঠল। হাত পা কাঁপছে। কোথায় গেল ওর সাহস।আত্মাদের নিয়ে কাজ করবে। ওর কতো নাম হবে। আস্তে আস্তে ঠাম অরিন্দমের দিকে আসছে। ঠামের হাতে একটা পেতলের থালা। সাদা থান পড়ে আছে ঠাম। ধোঁয়ার মধ্যে ঠামকে অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। অরিন্দম দুই হাঁটুর মধ্যে দু’ হাত দিয়ে বসে আছে ঠামের ঘরে এককোনে ।
–অরি অরি..ঠাম অরিন্দমকে অরি বলে ডাকতো। এই থালাতে গুজিয়া আছে বাবা খেয়ে নিস। রেখে গেলাম। ঠাম অদৃশ্য হয়ে গেল।ৎধোঁয়াতে অরিন্দমের চোখ বন্ধ হয়ে গেল। হাত পা শরীর পুরো কাঠ হয়ে গেছে অরিন্দমের। মিনিট পাঁচ পর অজয় ঠামের ঘরে এসে লাইট জ্বালিয়ে দেখল অরিন্দম মাথা কাত্ করে মেঝেতে লুটিয়ে আছে।
–এই অরি ওঠ। সাহসী ছেলের কাণ্ড দেখো।
অনেক জল ছেটানোর পর অরির জ্ঞান ফিরলো।
কি কথা হল ঠামের সঙ্গে।
– গুজিয়া দিয়েছে ঠাম।
–কৈ দেখি? ওমা তাইতো পেতলের থালাতে গুজিয়া আটটা।
– আমি পেরেছি ইয়েস। ঠামের
আত্মা আমাকে গুজিয়া দিয়ে চলে গেল ।
– কচু পোড়া, তুই অজ্ঞান হয়ে গেলি কেন?কিছু জানতে চাইবি তো, বোকা গাধা কোথাকার।
চল তোকে বাড়ি দিয়ে আসি।শরীরের যা অবস্থা। অজয় এখনই মাকে কিছু বলবিনা কিন্তু। সময় বুঝে পরে বলব।
– আচ্ছা,এবার বলতো কি ঘটল ?
–ঠামের ঘরটা ধোঁয়াতে ভরে গেল। আমি ধোঁয়ার মধ্যে আবছা দেখতে পেলাম ঠামের হাতে থালা। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল আমার। জল জল উচ্চারণ করছি কিন্তু কণ্ঠস্বর বাইরে আসতে পারছে না। এমন সময় ঠাম বলে উঠলো, কি খেতে চাস বল অরি।
-তারপর কি হল?
– আমার শরীর ঠাণ্ডা হতে লাগল,তারপর জানিনা,
অজয় রাত্রি বেলায় খেতে বসেছে ওর ঠাম বললো, আর একটা রুটি নে দাদুভাই ।
অরির জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে রে। যদি তোর পিসির বাড়ি যাবার আগে ছেলেটাকে কিছু খাওয়াতে পারতাম। কে জানতো কচি বয়সে ওকে চলে যেতে হবে।
ঠাম তুমি যা দেখলে কাউকে বলো না কিন্তু ।
— কাল বিকেলেই তো চলে যাব। আর হয়তো নাও ফিরতে পারি। তবে অরির ঐ দৃশ্য কোনদিন ভুলবো না রে।
অজয় খেয়ে ঠামকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল।
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে নিল।ঠামকে পিসি বাড়ি দিয়ে মা বাবাকে নিয়ে সেই রাতে বাড়ি ফিরবে অজয়। মনে মনে খুব খুশি অজয়, অরিকে বোকা বানাতে পেরে। একদিন ভিতু বলে খুব হেনস্থা করেছে অরি।
পাজামা পাঞ্জাবী পড়ে রওনা দিল অজয়।
সন্ধ্যা সাতটার সময় ওরা যখন বাড়ি ফিরছে তখন শিবু ,দিলু, চন্দন খই ছিটাতে ছিটাতে যাচ্ছে স্বর্গরথ আগে পেছনে ওর বন্ধুরা।
অজয় গাড়ি থেকে নেমে ওর মাকে বললো, তোমরা এগিয়ে যাও আমি যাচ্ছি। ওদের
গাড়িটা চলে গেল।
অজয় জিজ্ঞাসা করলো, কার কি হল রে আমাকে জানাস নি কেন?
দিলু কেঁদে কেঁদে বলল অরির খুব জ্বর হয়ে ছিল।
-হ্যাঁ , বল বল উতলা হয়ে উঠল অজয়।
–গতকাল রাতে অরি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিল। সকাল বেলায় আমরা খবর পেয়েছি অরি আর নেই। তোর বাড়িতে খবর দিতে এসেছিলাম। দরজাতে তালা দেওয়া দেখে ফিরে যাই। তারপর আমরা অরির
বাড়িতেই ছিলাম। এখন দাহ করতে যাচ্ছি।
অজয় মাথায় হাত দিয়ে রাস্তার ওপর বসে পড়লো।
মনে মনে অনুতাপ করতে লাগলো। একটা প্রাণ এই ভাবে চলে গেল। মজা করার জন্য করছিলাম আর ভয় পেয়ে এই পরিণতি হল অরির।
বাড়ি ফিরে অজয় অন্যমনস্ক হয়ে গেল।খাওয়া ঘুম সব উড়ে গেল ওর। রাত নিঝুম, বারোটার ঘন্টা বাজল দেওয়াল ঘড়িতে ঢংঢংঢং। অজয়ের জানলার পর্দা হাওয়ায় উড়ছে ।কিন্তু বাইরে তো হাওয়া নেই। গুমোট গরম।
-অজয় আমাকে দেখতে এলি না..
– কে? কে?
– শ্মশানে গেলি না কেন?
-অরি তুই। আমাকে মাপ করে দে। আমার ঠাম বেঁচে আছে রে।আমি পরীক্ষা করার জন্য এসব করেছি। তোর কত সাহস শুধু এটা দেখার জন্য।
-ঠামকে নিয়ে সকালে বের হলি তাই তো! তখন আমি অন্য জগতে।
মা..মা অরি অরি,
অজয়ের মা বাবা অজয়ের চিৎকার শুনে ঘরে এসে দেখলো অজয় মুখ থুবড়ে মেঝেতে লুটিয়ে আছে।
তাড়াতাড়ি করে চোখে মুখে জল ছিটিয়ে অজয়ের জ্ঞান ফেরালো।
অজয় শুধু বলছে, অরি অরি ফিরে আয়।ঠাম বেঁচে আছে।
– কি ভুল বকছিস!
– জানো মা অরি নেই।
– তুই ঘুমা চুপ করে। সারা রাত এবং সকালেও অজয়ের ধুম জ্বর। অরি ওর মাথার কাছে বসে আছে। অজয়ের থেকে থেকে জ্ঞান ফিরছে। অরিকে দেখে আবার সারা শরীর কাঁপিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে অজয়।
শিবু ,দিলু ,চন্দন যত বলছে অরির হাতটা ধর অজয় ,একবার ধর। অজয় তত বার চোখ মুখ বিকৃত করে বলছে বদলা নিতে এসেছে অরি বদলা।
চন্দন বললো, অজয় কাল রাতে আমরা শ্মশানে নিয়ে যাচ্ছিলাম দে কাকুর মাকে, একশ বছর হয়ে ছিল বুড়ির। একটু মজা করতে পারব না আমরা তুই বল অজয়?
অরি বললো, অজয় কাল সকাল বেলায় ঠামকে নিয়ে তুই যাচ্ছিলিস, আমি দেখেছিলাম রে,তাই একটু মজা করলাম।
অজয় নির্বাক, এক এক করে দিন যায়, অজয় মনমরা হয়ে থাকে সবসময়,
বন্ধুদের মধ্যেই ঘটনাটা চাপা থাকল। সেই রাতের ঘটনা অরি,অজয় ওদের মা বাবারা কিছু জানতে পারল না। তবে অজয় অরির সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করার পর সবাইকে বলে অরির আত্মার সাথে আমি অজয় ঘন্টা খানেক ছিলাম ।
I want to join it can Anyone help me .
Go to our menu options, and see ‘contact us!’. For further any queries please contact with us. With regards, Alapimon